আজ মহান মে দিবস ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হে
মার্কেট চত্বরে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে
অনেক শ্রমিক হতাহত হন। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। দেশে
দেশে গড়ে ওঠে মেহনতি জনতারঐক্য। অবশেষে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য
হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত
দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা দিনটিকে স্বীকৃতি
দিয়ে 'মে দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৮৯০ সাল থেকেপ্রতি বছর
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে মে দিবস।
পূর্বে শ্রমিকদের অমানবিক পরিশ্রম করতে হত,প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে
১২ ঘন্টা আর সপ্তাহে ৬ দিন। বিপরীতে মজুরী মিলত নগন্য, শ্রমিকরা খুবই
মানবেতর জীবনযাপন করত, ক্ষেত্রবিশেষে তা দাসবৃত্তির পর্যায়ে পড়ত। ১৮৮৪
সালে যুক্তরাষ্ট্রেরশিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করার
জন্য আন্দোলন শুরু করেন, এবং তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা সময়
বেঁধে দেয় ১৮৮৬ সালের ১লা মে। কিন্তু কারখানা মালিকগণএ দাবী মেনে নিল
না।
৪ঠা মে ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগোর হে-মার্কেট
নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। তারা
১৮৭২ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল শ্রমিক শোভাযাত্রার সাফল্যে
উদ্বুদ্ধ হয়ে এটি করেছিলেন। আগস্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া
শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন।
হঠাৎ দূরে দাড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরন ঘটে, এতে এক পুলিশ
নিহত হয়।পুলিশবাহিনী তৎক্ষনাত শ্রমিকদের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা
রায়টের রূপ নেয়। রায়টে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। পুলিশ হত্যা মামলায়
আগস্ট স্পীজ সহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এক প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭
সালের ১১ই নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
লুইস লিং নামে একজন একদিন পূর্বেই কারাভ্যন্তরে আত্মহত্যা করেন,
অন্যএকজনের পনের বছরের কারাদন্ড হয়। ফাঁসির মঞ্চে আরোহনের পূর্বে আগস্ট
স্পীজ বলেছিলেন, "আজ আমাদের এই নি:শব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক
শক্তিশালী হবে"। ২৬শে জুন, ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্ণর অভিযুক্ত আটজনকেই
নিরপরাধ বলে ঘোষণা দেন, এবং রায়টের হুকুম প্রদানকারী পুলিশের কমান্ডারকে
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। আর অজ্ঞাত সেই বোমা বিস্ফোরণকারীর
পরিচয় কখনোই প্রকাশ পায়নি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটঃ
প্রথমে আসি গার্মেন্টেস শ্রমিকদের কথায়। আমাদের গার্মেন্টেস শিল্পের অল্প
সংখ্যক কারখানা আছে যারা সরকারী নিয়ম মানে। বেশীর ভাগ কারখানার নুন্যতম
কাজের সময় সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা মোট ১২ ঘন্টা কিন্তু তারপরও রাত ১০টা
১১টা পর্যন্ত চলে। মাসে হয়ত একটি শ্রুক্রবার বন্ধ পায়। এখানে শ্রমিকদের
নিজের দিন বলতে কিছু নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন